দৈনন্দিন জীবনে যা যা করা উচিত আর ভালো সেগুলো এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে

ছোট বা বড় যেকোনো গুনাহই অন্তরকে অন্ধকার করে তোলে এবং আমলকে নষ্ট করে দেয়। কুরআন ও হাদিসে বারবার সতর্ক করা হয়েছে পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য। গীবত, মিথ্যা, সুদ, অশ্লীলতা, অন্যায়ভাবে কারো অধিকার নষ্ট করা—এসবের প্রতিটি আল্লাহর কাছে বড় গুনাহ। তাই একজন মুমিনের কর্তব্য হলো সর্বদা আল্লাহকে ভয় করা, হারাম ও সন্দেহজনক কাজ থেকে দূরে থাকা এবং কোনো ভুল হলে সাথে সাথে তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

💠আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিক সময়ে আদায় করা।
💠প্রতিদিন কিছু সময় কুরআন তিলাওয়াত ও বোঝার চেষ্টা করা।
💠সকাল ও সন্ধ্যায় যিকর, দোয়া ও দরুদ শরীফ পড়া।
💠হালাল উপার্জন করা এবং কাজে সততা ও আমানতদারিত্ব বজায় রাখা।
💠মা–বাবা, স্ত্রী–সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের প্রতি দায়িত্ব পালন করা।
💠প্রতিবেশীর হক আদায় করা ও তাদের কষ্ট না দেওয়া।
💠অন্যের উপকার করা, দান-সদকা করা ও অভাবীদের সহায়তা করা।
💠খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ, শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা।
💠সুন্নত অনুসারে খাওয়া, ঘুমানো, পোশাক পরা ও কথা বলা।
💠প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা ও সত্য কথা বলা।
💠সুন্নত অনুযায়ী সালাম দেওয়া ও উত্তর দেওয়া।
💠হাসিমুখে কথা বলা (এটাও সদকা)।
💠জ্ঞান অর্জন করা এবং তা দিয়ে অন্যকে উপকৃত করা।
💠সময়মতো তাহারাত, অজু, গোসল ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
💠পোশাকে ও শরীরে পর্দা বজায় রাখা।
💠ঘরে প্রবেশ করার সময় সালাম ও দোয়া বলা।
💠বাজারে গেলে বাজারের দোয়া পড়া।
💠ভ্রমণ করলে ভ্রমণের দোয়া পড়া।
💠প্রতিদিন নিজের ভুল নিয়ে চিন্তা করে তওবা ও ইস্তেগফার করা।
💠ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়া।
💠অসুস্থ, অভাবী ও দুস্থদের খোঁজখবর নেওয়া।
💠ভালো কাজের নির্দেশ দেওয়া (আমর বিল মারুফ) ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা (নাহি আনিল মুনকার)।
💠অন্য মুসলমানদের জন্য দোয়া করা।
💠সকাল-বিকালে শরীরচর্চা বা হাঁটা, যাতে শরীর সুস্থ থাকে।
💠সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা—কাজ, ইবাদত, পরিবার, বিশ্রাম—সব কিছুতে ভারসাম্য রাখা।
💠অন্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা, অন্যের দোষ ঢেকে দেওয়া।
💠অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা।
💠আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে চিন্তাভাবনা করা (তাফাক্কুর)—আকাশ, পৃথিবী, প্রকৃতি, নিজের জীবন।
💠সন্তানদের ইসলামী শিক্ষা দেওয়া ও ভালো চরিত্র গঠনে মনোযোগ দেওয়া।
💠শরিয়তসম্মত বিনোদন গ্রহণ করা (যেমন হালাল মজলিস, ক্রীড়া, ভ্রমণ ইত্যাদি)।
💠আল্লাহর কাছে সব কাজে সাহায্য চাওয়া (ইস্তিখারা, দোয়া, তাওয়াক্কুল)।
💠আত্মীয়তার সম্পর্ক (সিলাতুর রাহিম) বজায় রাখা।
💠আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া—কবর, হিসাব, জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে সচেতন থাকা।

রেফারেন্স (স্থানধারক):

💠গীবত, মিথ্যা, অপবাদ থেকে বিরত থাকা।
💠চুরি, ঘুষ, সুদ, প্রতারণা করা থেকে বেঁচে থাকা।
💠অশ্লীলতা, গান-বাজনা, অশালীন কথা থেকে দূরে থাকা।
💠নারী–পুরুষ অবৈধ মেলামেশা ও পর্দাহীনতা থেকে বিরত থাকা।
💠কারও অধিকার নষ্ট না করা এবং কাউকে কষ্ট না দেওয়া।
💠অহংকার, হিংসা, হঠকারিতা ও রাগ থেকে বাঁচা।
💠অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া, অপচয়, ফূর্তিবাজি থেকে দূরে থাকা।
💠সময় নষ্ট না করা, বরং উপকারী কাজে সময় ব্যবহার করা।
💠নামাজ, কুরআন ও ইবাদতে অলসতা করা থেকে বাঁচা।
💠অন্যকে ছোট করা, গালি দেওয়া বা কটু কথা বলা থেকে বিরত থাকা।
💠দুনিয়ার মোহে পড়ে আখিরাত ভুলে যাওয়া থেকে বাঁচা।
💠হিংসা, বিদ্বেষ, মনোমালিন্য না রাখা; কাউকে ক্ষমা করে দেওয়া।
💠হারাম রোজগার দিয়ে পরিবার চালানো।
💠শরীর, পোশাক ও ঘর-পরিবেশ নোংরা রাখা।
💠হারাম সম্পর্ক, হারাম বিনোদন, হারাম খাবার ও পানীয় গ্রহণ করা।
💠সময় অপচয় করা যেমন—অকারণে আড্ডা, সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাহীন সময় ব্যয়।

রেফারেন্স (স্থানধারক):

💠ইবাদতময়: নামাজ, কুরআন, যিকর, দোয়া।
💠চরিত্রময়: সততা, নম্রতা, দয়া, সত্যবাদিতা, হাসিমুখ।
💠পারিবারিক দায়িত্বশীল: মা–বাবা, স্ত্রী–সন্তান, আত্মীয়ের হক আদায়।
💠সামাজিক দায়িত্বশীল: প্রতিবেশী, বন্ধু, অসুস্থ ও অভাবীদের খোঁজখবর।
💠অর্থনৈতিকভাবে সৎ: হালাল উপার্জন, ঘুষ-সুদ-প্রতারণা থেকে মুক্ত।
💠নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে: গীবত, মিথ্যা, অশ্লীলতা, অহংকার।
💠আত্মসমালোচনামূলক: প্রতিদিন নিজের ভুল বিশ্লেষণ ও তওবা।
💠আখিরাতের প্রস্তুতিমূলক: জান্নাতের জন্য চেষ্টা, জাহান্নাম থেকে বাঁচার চিন্তা।

রেফারেন্স (স্থানধারক):

একদল সাহাবী সফরে ছিলেন। তাঁরা একটি আরব গোত্রের নিকট গেলেন। তখন সেই গোত্রপ্রধানকে বিচ্ছু দংশন করে। সাহাবীগণ বললেন: ‘আমাদের মধ্যে একজন রুকইয়া (ঝাড়ফুঁক) করবে, তবে শর্ত হলো, তোমরা আমাদের কিছু ছাগল দেবে।’ তারা রাজি হলো। সাহাবী সুরা ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিলেন, আর রোগী সুস্থ হয়ে গেল।...”
পরে তারা নবী ﷺ-এর কাছে এসে ঘটনা জানালে তিনি (ﷺ) বললেন:
“কিভাবে বুঝলে যে, এটি রুকইয়া (শিফা)?”
এবং তিনি (ﷺ) হাসলেন, তারপর বললেন: “তোমরা যা নিয়েছো (ছাগলগুলো), তা ভাগ করে নাও, আর আমাকেও একটি অংশ দাও।

এই হাদিস থেকেই আলেমগণ বলেন, সুরা ফাতিহা হলো শিফার সূরা।

الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿١﴾ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ﴿٢﴾ مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ ﴿٣﴾ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ﴿٤﴾ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ﴿٥﴾ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ ﴿٦-٧﴾
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন (১) আররাহমানির রাহীম (২) মালিকি ইয়াওমিদ্দীন (৩) ইইয়াকা নাবুদু ওয়া ইইয়াকা নাস্তাঈন (৪) ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকীম (৫) সিরাতাল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম গাইরিল মাগদুবি ‘আলাইহিম ওয়ালা দ্দল্লীন (৬-৭)।

অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক। পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু। বিচার দিনের মালিক। আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য চাই। আমাদের সরল পথে পরিচালিত করো—তাদের পথে যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছো, তাদের পথে নয় যাদের উপর তোমার গজব নাযিল হয়েছে, আর নয় পথভ্রষ্টদের পথে।

রেফারেন্স (স্থানধারক): কিতাবুস সালাম (শান্তি ও চিকিৎসা অধ্যায়) হাদিস নম্বর: 2201